সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫,
২ আষাঢ় ১৪৩২
বাংলা English

সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
শিরোনাম: চতুর্থ দফায় আবারও ইসরায়েলে ইরানের হামলা      করোনা-ডেঙ্গুর সংক্রমণের হুমকিতে এবার শিক্ষাঙ্গন       তেল আবিব যেন মৃত্যুপুরী      প্রথম হামলার পূর্ণ প্রতিশোধের আগে যুদ্ধবিরতি নয়: ইরান      গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু মারা গেছেন      প্রেস ক্লাব এলাকা হঠাৎ উত্তপ্ত, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ পুলিশের      ইসরায়েলের সব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ‘কাসেম বাসির’      
খোলাকাগজ স্পেশাল
রফতানি ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ৮:৫৩ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ নীতি ঘোষণার পর বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিবেশে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের রফতানি খাতে। ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের তালিকায় বাংলাদেশের নাম যুক্ত হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতসহ অন্যান্য রফতানিনির্ভর খাতগুলো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক তৎপরতা ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘ট্রাম্প রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস অ্যান্ড বাংলাদেশ কমপ্লিকেশনস অ্যান্ড রেসপন্স’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। 

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ট্যারিফের প্রভাব একেক দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে। যারা মনে করেন, চীনের ওপর বেশি হারে ট্যারিফ আরোপ করায় বাংলাদেশ বেশি উপকৃত হবে, বিষয়টি ঠিক নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে চীন মেন মেইড পোশাক রফতানি করে। আর বাংলাদেশের রফতানির ৭০ ভাগ কটন। ফলে বাংলাদেশ খুব বেশি উপকৃত হবে না। 

তিনি বলেন, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশ ১৮০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করেছে। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের ওপর ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। বাংলাদেশ কোনো একটি আইটেমে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেয়, অন্য দেশকেও সেই সুবিধা দিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। আলোচনার ওপর নির্ভর করবে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী ধরনের সুবিধা নিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুব কম, সেটি কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নির্ভর করবে সামগ্রিক পলিসির ওপর। 

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আর ট্রাম্পের এই ট্যারিফ পলিসি আমাদের এলডিসি থেকে বের হওয়াতে সহায়তা করবে। ৯০ দিন পর কী হয়, সেটির ওপর নির্ভর করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, দেখতে হবে ও এরপর পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যদি আমদানি ২০০ শতাংশ ও রফতানি ৫০ শতাংশ বাড়ানো যায়, তবেই শুল্ক শূন্য হতে পারে। বাস্তবে এটি আসলে সম্ভব নয়।

সিপিডি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য একটি সুপরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত টিকফা চুক্তি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনার মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। এ চুক্তিকে কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রফতানি পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড়ের আবেদন করতে পারে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএর) এবং বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শ্রমমান, মেধাস্বত্ব সুরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণসহ নানা বিষয়ে দেশে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাহী আদেশ অনুসারে, যদি কোনো পণ্যের ২০ শতাংশ উপাদান যুক্তরাষ্ট্র-উৎপাদিত হয়, তবে সেই পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর পরিমাণে তুলা আমদানি করে, তাই তুলার ক্ষেত্রে বিশেষ গুদাম সুবিধা এবং সুদসুবিধাযুক্ত ঋণের সুযোগ চালুর মাধ্যমে আমদানি বাড়িয়ে এই সুবিধা কাজে লাগানো যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফবিআই) আকৃষ্ট করলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কনটেন্ট শর্ত পূরণ করাও সহজ হবে। বাংলাদেশের উচিত ডাব্লিউটিও-তে আরো পণ্যের শুল্কহার বাস্তবসম্মতভাবে বাধা দেওয়া এবং বর্তমানে বিদ্যমান উচ্চ শুল্কসীমা (১৫৫ শতাংশ) কমিয়ে আনা। মেধাস্বত্ব (আইপিআর) সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে এবং নকল পণ্যের বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি নিতে হবে। বৈশ্বিক বাণিজ্য অঙ্গনে সম্ভাব্য শক্তির পুনর্গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে যেমন ব্রিকস জোটের নতুন কৌশলের দিকে নজর রাখতে হবে, তেমনি বিমসটেক-এর মতো আঞ্চলিক সহযোগিতাও জোরদার করতে হবে। আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নিয়ে সক্রিয়ভাবে আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির অভিঘাত মোকাবিলাকে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য চীন। তাদের সম্পর্ক এখনো নির্ধারিত হয়নি। ফলে আমেরিকা নিয়া বাংলাদেশের করণীয় এখনো নির্ধারিত নয়। বাংলাদেশের উচিত হবে আগামী ৫ বছর বিকল্প বাজার খোঁজা। ইইউর বাজারে আরো কয়েক বছর বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা থাকবে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বাজারে নজর দিতে হবে। আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র হবে এশিয়া। নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দিয়ে বিকল্প এসব বাজারে রফতানি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনকে রোগের সঙ্গে তুলনা করে বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি পুরোটা অনিশ্চিত প্রক্রিয়া। তবে মোটা দাগে ধরা যেতে পারে এই শুল্ক নীতিতে চীন তাদের মূল টার্গেট। তবে নির্ধারিত সময় শেষে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশগুলোর ওপর শুল্ক কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু আমাদের মার্কেটের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ক্রেতাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ৫০ শতাংশ নেগোশিয়েসন করতে হবে। এর জন্য কারখানাগুলোকে ব্যাংকের সাপোর্ট দিতে হবে। তবে এ প্রক্রিয়াটা কেবল একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়া জরুরি। যা আগামী ৯০ দিনের জন্য কার্যকর হবে। 
তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের রফতানি কিছুটা কমতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তবে আগামী ৯০ দিন পরে পরিস্থিতি যাই হোক, এতে সরকারের সহযোগিতা থাকতে হবে। 

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, এটি পারস্পরিক শুল্ক নয়। যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, তা বুঝে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা সহজ নয়। আগে বারবার তারা বলেছে, বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয়। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

চতুর্থ দফায় আবারও ইসরায়েলে ইরানের হামলা
পুঠিয়ায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার
করোনা-ডেঙ্গুর সংক্রমণের হুমকিতে এবার শিক্ষাঙ্গন
তেল আবিব যেন মৃত্যুপুরী
প্রথম হামলার পূর্ণ প্রতিশোধের আগে যুদ্ধবিরতি নয়: ইরান

সর্বাধিক পঠিত

সালিশে ঢেকে নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা
নরসিংদীর পলাশে কলাবাগান থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার
বিএনপির গলার কাঁটা তৃণমূলের কোন্দল
বাবার অবদান বাবার সম্পত্তিতে নয়, বাবার অবদান আমাদের অস্তিত্বে
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close